শফিকুল ইসলাম খোকন,
ভেতরে একদিকে চলছে গরু জবাই, আরেক দিকে মাংস কাটাসহ আনুসাঙ্গিক কাজ। কাটাকাটি শেষ হলেই খুলে যাবে গেট, মিলবে মাংস। এ জন্যই হতদরিদ্রের দীর্ঘ অপেক্ষা। কেউ রাস্তার পাশে, কেউ পাশের দোকানে আবার কেউ কেউ রিকশা, হুইলচেয়ারে! এক টুকরো মাংসের আশায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন বৃদ্ধ -বৃদ্ধা, শিশু, প্রতিবন্ধী সবাই।
সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছেন তারা, কখন গেট খুলবে, মিলবে মাংসের টুকরা। কিন্তু হঠাৎ ভেতর থেকে ছুটে এলো কয়েকজন যুবক। একজনের হাতে অনটাইমের কাপ, আরেকজনের হাতে বড় গামলা নিয়ে সবাইকে দিচ্ছেন ঠান্ডা ছোট মালাই আর ফিরনি। একটু প্রশান্তির জন্যই এ আয়োজন। কখন তৈরি হবে মাংস আর কখন প্যাকেট করে দিবে অসহায়দের হাতে এমন চিন্তা করেই অপেক্ষায় থাকা মানুষদের একটূ প্রশান্তি;
এমন চিত্র দেখা গেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর বাস ভবনের গেটে। এ চিত্র শুধু এখানেই নয় গ্রাম এবং শহরের প্রতিটি বিত্তবানদের ঘরে ঘরে এক টুকরো মাংসের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গরিব-অসহায় মানুষ। এখানে ঠিক তার উল্টো। প্রতি বছরই হাজার হাজার দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ সহ পেটপুরে একবেলা খাইয়েও দিচ্ছেন। সময় যখন দুপুর একটা তখনই বাইরে অপেক্ষায় থাকা মানুষদের মালাই বিতরণ করেছেন।
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাংসের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গরীব লোকজন।
পাথরঘাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কলেজ গেট সংলগ্ন জাতীয় সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা ও প্রয়াত এমপি গোলাম সবুর টুলুর বাস ভবনের সামনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির মাংস দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
গেটে অপেক্ষমান হাজেরা বেগম, জাহানারা, মমতাজ বেগম, আব্দুর রহিম, আ. করিমসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা গরিব মানুষ, আমাদের ওপর কোরবানি ফরজ তো হয়নি। তারপরও এক কেজি মাংস কেনার ভাগ্য আমাদের নেই। তাই অন্তত বিত্তবানদের কাছে এসে যদি কোনো মাংস পাই তা দিয়ে সন্তানদের নিয়ে এক বেলা খাব।
তারা আরও বলেন, অন্তত কোরবানির ঈদের দিন একবেলা সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।
গেটে অপেক্ষায় থাকা ৭০ বছরের আমেনা বেগম বলেন, বাড়ির ভেতর কেবল মাংস কাটাকাটির কাজ চলছে। তাই খোলা হচ্ছে না ধনীদের বাড়ির ফটক। ছোট গেটের সামনে একজন দাঁড়িয়ে আছেন, যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে। কাটাকাটি শেষ হলেই গেট খুলে বাইরে অপেক্ষমাণদের মাংস দেওয়া হবে।
সদর ইউনিয়ন থেকে আসা সালেহা বেগম বলেন, সকাল থেকেই বসা একটু মাংসের জন্য। অনেক গরম। ভেতর থেকে কয়েকজন এসে ঠান্ডা মালাই দিয়েছে, তাতে একটু হলেও কইলজডা ঠান্ডা হইছে।
প্রতিবন্ধী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সকাল থেকেই গেটে অপেক্ষা করছি। প্রতি বছর এখান থেকে মাংস পাই, তাই আসছি। যা পাই তা দিয়ে পোলাপানের মুখে দিতে পারি।
সাংসদ সুলতানা নাদিরার ব্যক্তিগত সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানির দিন অসহায়দের মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। আশা করছি যারা আসবেন, কেউ খালি হাতে ফিরবেন না। তাছাড়া আজকে একটু ভিন্নতা এনেছি তা হচ্ছে অনেক মানুষ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছে তাদেরকে নাস্তা এবং ঠান্ডা মালাই দেয়া হয়েছে। যাতে করে তাদের কোন কষ্ট না হয়
পাথরঘাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কাকন বলেন, মানবতা এখনো হারিয়ে যায়নি, এখনো আছে যার প্রমাণ এখানেই। মাংস তো দিচ্ছেই তারপর দুপুরের দিকে গরমে প্রশান্তির জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষদের মাঝে ঠান্ডা মালাই বিতরণ করা হয়। এ কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
Leave a Reply