পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি,
বরগুনার পাথরঘাটায় মুক্তা (১৩) নামের ৭ম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে লাইব্রেরীতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফয়সাল ও জুবায়ের নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে। এঘটনার পরে লজ্জায় ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকে মুক্তার বাবা মো. মোস্তফা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বেলা সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চরদুয়ানী বন্দর বাজারের মিনা লাইব্রেরী এন্ড কসমেটিকস এর দোকানে এ ঘটনা ঘটে। পরে পার্শ্ববর্তী ব্যাবসায়ী শাহাদত, লাবু ও মিলন তাদেরকে উদ্ধার করেন।
মুক্তা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঠালতলী গ্রামের মো. মোস্তফার মেয়ে ও চরদুয়ানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী।
অভিযুক্তরা হলো, পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঠালতলী এলাকার মো. বেল্লাল হোসেনের ছেলে ফয়সাল, চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছহেরাবাদ এলাকার মোশারফ এর ছেলে জোবায়ের এবং কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুক চরদুয়ানী এলাকার মনির হোসেনের ছেলে ও লাইব্রেরী ব্যাবসায়ী সাকিবুল ইসলাম হৃদয়।
ঘটনা স্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ৮ম শ্রেনির মাদ্রাসার ছাত্রী তন্নি তার বান্ধবী মুক্তাকে নিয়ে চরদুয়ানী বাজরের মিনা লাইব্রেরী এন্ড কসমেটিক্সের দোকানে কেনাকাটার জন্য প্রবেশ করে। সেখানে মুক্তা ও তন্নির পূর্ব পরিচিত জুবাইয়ের ও তার বন্ধু ফয়সাল লাইব্রেরীতে ঢুকে সাটার টেনে বন্ধ করে দেয়। পরে দোকানদার শাকিব তাদের ৪জনকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। সেখানে জোবায়ের মুক্তাকে জোড় করে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখেন। পরে আবার ফয়সাল গিয়ে পূর্ণরায় তাকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি বেলা দেড়টার দিকে দিকে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। পরে দোকানদার শাকিবকে তার দোকান খুলতে বাধ্য করে। এরপর ভিতরে ঢুকে স্কুলছাত্রী মুক্তার মাস্ক খুলে বিভিন্ন মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় কিছু যুবক। পরে এই ঘটনা নিয়ে সালিশ বৈঠক হবে স্থানীয়দের এমন স্বীদ্ধান্তে ওই দুই ছাত্রীকে তাদের অভিভাবক এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জানাজানি হলে লজ্জায় দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বসতঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে স্কুলছাত্রী মুক্তা আত্মহত্যা করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী শাহাদাত ফিটার জানান, দোকানের মধ্যে দুটি ছেলে ছিল তাদের মধ্যে ফয়সাল বিবাহিত, সে তন্নীর প্রেমিক। এছাড়াও জুবায়েরের সাথে মুক্তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে দিতে ফয়সাল ও তন্নির সহযোগিতা ছিল বলে জানান তিনি।
মুক্তার বান্ধবী তন্নী বাড়িতে বিষয়টি চানতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মা হোনেয়ারা বেগম জানান, তন্নী ও মুক্তা লাইব্রেরীতে যান। সেখানে জোবায়ের ও ফয়সাল নামর দুটি ছেলে ছিলো। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দোকানদার সাকিবুল ইসলাম হৃদয় দোকান বন্ধ করে দেন। দোকানের পিছনের রুমে জোবায়ের মুক্তাকে নিয়ে যান। এর পরে কি হয়েছে তা হোনেয়ারা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মুক্তার মা বলেন, ওই দিন আমার মেয়ে বাড়ি থেকে সাড়ে ৯টার দিকে স্কুলে যায়। আমি জানতাম না এরকম ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের দিকে জানতে পেরেছি। বাড়ি এসে আমার মেয়ে আমার কাছে লাইব্রেরীতে অটকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখার বিষয়ে বলে গেছে। লোকলজ্জার ভয়ে আমরা কারো কাছে কিছুই বলিনি। এ লজ্জয় আমার মেয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি এর সুষ্ঠ বিচার চান।
মিনা লাইব্রেরী এন্ড কসমেটিকস ব্যাবসায়ী সাকিবুল ইসলাম হৃদয় বিষয়টি স্বীকার করে এক সাংবাদিকের কাছে জানান, তাদেরকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে দোকানে তালা দিয়ে পাথরঘাটা বাজারে আসেন, এর পরে কি হয়েছে তা তিনি কিছুই জানেন না।
অভিযুক্ত জোবায়েরের বাবা মোর্শারফ হোসেন জানান, এরকম একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। যদি আমার ছেলে এরকমের কাজ করে থাকে তাহলে আমিও চাই তার উপযুক্ত বিচার হোক।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন জানান, এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এর আগে কি ঘটেছিল তা কেউ পুলিশকে অবহিত করেনি। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এখন ঐ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের অভিযোগ করছে। ধর্ষণের বিষয়টি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে। এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply