পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি,
ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে নাজেহাল বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার কাঁচা বাজার জামে মসজিদে নামাজ পরতে আসা মুসল্লিরা। যেখানে বসে অজু করে পাক পবিত্র হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করবে তার পাশেই ফোলা হচ্ছে পাথরঘাটা পৌরসভার সকল ময়লা।
এদিকে পাথরঘাটা পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ভ্যানে করে ভ্রাম্যমান দোকানিরা আমসহ বিভিন্ন কাঁচা মাল বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমান দোকানিদরাও যত্রতত্র ফেলে রেখেছে ময়লা। এতে করে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। এবিষয় গুলো বারবার পৌর মেয়রকে জানিয়েও হয়নি কোনো সমাধান।
পাথরঘাটা ১৯৯০ সালে পাথরঘাটা পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে পাথরঘাটা পৌরসভা ২য় শ্রেনীতে উন্নিত হলেও সুপরিকল্পিত মাস্টার প্ল্যান না থাকায় এ শহরে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, অপ্রতুল সড়কবাতি ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির সংকট, মশার উপদ্রব সহ যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জনসাধারণকে।
পরে ২০২৩ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে তালিকা ভুক্ত হলেও, এখনো যেনো নিম্ন শ্রেণির পৌরসভায় পরে আছে পাথরঘাটা পৌরসভা। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই কোনো নির্দিষ্ট বর্জ ফেলার স্থান।
শনিবার বেলা বারোটার দিকে পাথরঘাটা পৌরসভার কাঁচা বাজার মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের অজু খানার পাশে ময়লার স্তুপ। একটু বৃষ্টি হলেই দুর্গন্ধে নাজেহাল হয়ে পরে সাধারণ মানুষ। সেখানেই পড়ে আছে পৌরসভার ডাস্টবিন। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডাস্টবিন থাকার কথা থাকলেও সেগুলো পরে আছে কাঁচা বাজার জামে মসজিদের অজুখানার সামনের ময়লার স্তূপের উপর। ময়লার স্তূপের এক পাশে কাঁচা বাজার জামে মসজিদ অপর পাশে পাথরঘাটা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন। এরই মাঝখানে ময়লার ভাগাড়। এ বিষয় দেখার জেনো কেউ নেই।
মসজিদে নামাজ পরতে আশা মুসল্লি ছগির মিয়া ও জামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নামাজ পড়ার জন্য এখানে আসি, অজুখানায় অজু করি। তবে এখানকার যে পরিস্থিতি, তাতে অজু করলে পাক পবিত্র হয় কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। পৌর মার্কেটের সকল ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই অজুখানার সামনে। একটু বৃষ্টি হলেই দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপ থেকে বের হওয়া পানি ছড়িয়ে পরে অজুখানার আশেপাশে। এবিষয়ে নিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে।
তারা আরও বলেন, অজুখানার সামনের ময়লা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন সমাধান হয়নি। মাসজিদে এক পাশে কাঁচা বাজার এর এক পাশে মুক্তিযুদ্ধা ভবন এর পিছনে পাথরঘাটা কেন্দ্রীয় গোরস্থান। মুসল্লীরা কবর জিয়ারত করতে যেতে পারছেনা এই ময়লার দুর্গন্ধের কারণে। তবে এবিষয় বরগুনা-২ আসেন সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা এমপি হস্তক্ষেপ করলে এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে জানা তারা।
মসজিদে ইমাম হাফেজ মো. মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অজুখানার সামনে ফেলা হচ্ছে ময়লা। কঠিন ও তরল সব ধরনের আবর্জনাই ফেলা হচ্ছে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ, বৃষ্টির পানিতে ময়লা-আবর্জনা মিশে দূষিত হচ্ছে অজুখানাসহ আশেপাশে রাস্তাঘাট। একটু বাতাস হলেই নোংরা কাগজ ও পলিথিন উড়ে গিয়ে পড়ছে মসজিদের মধ্যে। ময়লার দুর্গন্ধের কারনে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে মসজিদে নামাজ পড়তে আশা মুসল্লিরা। এতে মুসল্লিদের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান আকন বলেন, প্রতিনিয়ত পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এখানে ময়লা ফেলছে। তাদের কে বারবার বললেও বন্ধ হচ্ছেনা ময়লা ফেলা। স্থানীয় কাউন্সিলার ও পৌর মেয়রকে এবিষয় জানিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
পরিবেশবিদ ও পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, আমাদের জন্য আফসোস যে পাথরঘাটায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হয়নি। খোলা স্থানে আবর্জনা থাকায় নদীর পানি ও মাটিতে মিশছে। বাতাস দূষিত করছে। তাছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খারাপ। এ ক্ষেত্রে শুধু পৌর কর্তৃপক্ষেরই দায়ি নয়, পৌর নাগরিকদেরও দায় আছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মাঠে ময়লার স্তূপ থাকায় দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে, জনজীবন দুর্বিসহের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকিতে। এ যেন অভিভাবকহীন পৌরবাসী। দ্রুত অপসারণ এবং স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয় পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ময়লা সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। একবার ময়লা অপসরণের জন্য গাড়ি পাঠালে কাদা ও ময়লায় আটকে যায়। বৃষ্টি কমলে ময়লা সরিয়ে ফেলা হবে।
৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে মসজিদের অজু খানার সামনে ময়লা ফেলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই যেখানে ময়লা রাখা হবে। তাই সেখানে রাখা হয়েছিলো।
Leave a Reply