1. admin@dainikprothomprohor.com : admin : News Desk
মেট্রোরেলের কাজে মাটি খুঁড়তেই আওয়াজ, মিললো বিশাল গুপ্তধন - দৈনিক প্রথম প্রহর
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

মেট্রোরেলের কাজে মাটি খুঁড়তেই আওয়াজ, মিললো বিশাল গুপ্তধন

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩

মাটির নিচে চলছিল মেট্রো রেলের কাজ। এ সময় মাটি খোদাই করতে করতে থমকে যান কর্মী এবং প্রযুক্তিবিদরা। কারণ মাটিতে কোপ মারতেই শোনা যাচ্ছিল ঠুং ঠাং আওয়াজ। অতি সাবধানে মাটি একটু সরাতেই উঁকি মারতে থাকে গুপ্তধন!
মেট্রোর কাজ মাথায় ওঠে। মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা সেই সব ‘সম্পদ’ খুঁজে বার করতে তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। ঘটনাটি ১৫ বছর আগের, নেদারল্যান্ডস এর আমস্টারডাম শহরের।
নরম মাটির নিচে থেকে সেই নিদর্শন বাইরে বার করে আনা ছিলো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কয়েক বছরের চেষ্টায় সেই ‘সম্পদ’ মাটির নিচে থেকে বার করে আনা হয়।

বছরের পর বছর ধরে সেই পরিশ্রমের ফল বর্তমানে দেখা যায় রোকিন স্টেশনে। রোকিন মেট্রো স্টেশনে তৈরি করা ভূগর্ভস্থ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে মাটির নিচে থেকে উদ্ধার করা সম্পদের প্রায় ১০ হাজার নিদর্শন রয়েছে। মেট্রো প্ল্যাটফর্মের ওঠানামার দুই সিঁড়ির মাঝে একটি কাচের ঘরে জায়গা পেয়েছে ঐ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো।

রোকিন স্টেশনের আশপাশের এলাকা থেকে ঐ নিদর্শনগুলোর খোঁজ মিলেছিল বলে সেগুলো ঐ স্টেশনেই রেখে দেওয়া হয়।

রোকিন শহর আমস্টেল নদীর ধারে অবস্থিত। এই শহর এবং নদী এক সময় আমস্টারডামের প্রাণকেন্দ্র ছিল। তবে পরে শহর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোকিনের গুরুত্ব কমে।

মেট্রোরেলের কাজে মাটি খুড়তেই ঠুং ঠাং আওয়াজ, মিলল বিশাল গুপ্তধন
মেট্রোরেলের কাজে মাটি খুড়তেই ঠুং ঠাং আওয়াজ, মিলল বিশাল গুপ্তধন

অনেকের মতে আমস্টেল নদীতে ভেসেই ঐ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রোকিন এলাকায় এসে জমা হয় এবং বহু দিন ধরে পলি পড়ে পড়ে মাটির গভীরে ঢুকে যায়। আবার অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি আমস্টারডামের গৌরবময় ইতিহাসের নিদর্শন।

পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীদের মতে মাটির প্রায় ৩০ মিটার গভীর থেকে ঐ নিদর্শনগুলোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। যার মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ ১৫ হাজার বছরের পুরনো ঝিনুকের খোলও পাওয়া গিয়েছিল।

উদ্ধার করা নিদর্শনগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন অস্ত্র, বর্ম, খেলা এবং বিনোদনের জিনিস, শিল্প এবং কারুকার্য, ছোট মূর্তি, পোশাকের টুকরো, বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী ইত্যাদি।

প্রত্নতাত্ত্বিক পিটার ক্রানেনডঙ্কের কথায়, ‘উদ্ধার হওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে ৫০০ বছরের পুরনো মুদ্রাও রয়েছে।’ তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সেগুলোর মূল্য বিশাল কিছু নয়।

উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো প্রকল্পের পরিচালক হাইত ডেইটমার বলেন, এই নিদর্শনগুলোর খোঁজ মেলার আগে শহরটিতে আরো প্রায় ৭০ হাজার নিদর্শনের খোঁজ মিলেছিল।

মেট্রোর জন্য জমি খোঁড়ার সময় বেশ কিছু আধুনিক জিনিসও মেলে মাটির তলা থেকে। তার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন এবং চুরুটের পাইপ। তবে এই জিনিসগুলো উদ্ধার হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা বেশ উদ্বিগ্ন। তাদের দাবি— এত কম সময়ের মধ্যে ঐ আধুনিক জিনিসগুলো মাটির অত গভীরে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমস্টারডামের মাটি কি তা হলে ধীরে ধীরে ধসে যাচ্ছে? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি খননের সময় অনেক পশু এবং মানুষের হাড়ের টুকরোও উদ্ধার করা হয়েছে। একদা এই অঞ্চলে থাকা মাংসের দোকান থেকেই এই হাড়ের টুকরোগুলো মাটির তলায় এসে জমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মেলায় ফাঁপরে পড়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আমস্টারডামের উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো লাইনের নির্মাণকাজ ২০০৩ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই নিদর্শনগুলোর খোঁজ চলার কারণে কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে।

প্রায় ১৫ বছর ধরে মেট্রো লাইন তৈরির কাজ চলায় বরাদ্দ করা খরচ প্রায় দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে রোকিন স্টেশনে ছোটখাটো ভূগর্ভস্থ জাদুঘরের খোঁজ মেলায় খুশি সাধারণ মানুষ। ঐ জাদুঘর দেখতে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এসে রোকিন স্টেশনে ভিড় জমান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
কপিরাইট © ২০২২ দৈনিক প্রথম প্রহর. কম
ডিজাইন ও ডেভেলপ : ডিজিটাল এয়ার