1. admin@dainikprothomprohor.com : admin : News Desk
পর্যটক টানছে বরিশালের ‘দূর্গা সাগর’ - দৈনিক প্রথম প্রহর
শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

পর্যটক টানছে বরিশালের ‘দূর্গা সাগর’

  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

বরিশালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী দূর্গা সাগর। ২৪০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য বহন করে দেশের মধ্যে বরিশালের এই অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক নিদর্শনটি এনে দিয়েছে এক আলাদা পরিচিতি। মনোরম পরিবেশের দিঘিতে আসা অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ সাধারণ মানুষকে করে বেশি আকৃষ্ট।
বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় স্থানীয় জনগণের পানি সংকট নিরসনে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন চন্দ্রদ্বীপের পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ন। স্ত্রী রানী দূর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এ দীঘি খনন করা হয় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে। আর রানী দূর্গাবতীর নামেই দিঘীটির নামকরণ করা হয় দূর্গা সাগর। দিঘী খননে এক রাতে রাণী প্রায় ৬১ কানি জমি হেঁটেছিলেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী দীঘিটি ৪৫ একর ৫৫ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর চার শতাংশ পাড়। এছাড়া দীঘির চারপাশ দিয়ে ১.৬ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা রয়েছে। পাড়টি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৪৯০ ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট। দীঘিটির মাঝখানেই রয়েছে ছোট একটি দ্বীপ, যা এ দীঘির সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলেছে।

দীঘির মাঝামাঝি স্থানে অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছোট দ্বীপের ন্যায় তৈরি করা হয়। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি বৃক্ষ রোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। মধ্যখানে দ্বীপবিশিষ্ট এ দীঘির সর্বশেষ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সংস্কার করা হয়। দীঘির চার পাশে চারটি সুদৃশ্য বাঁধানো ঘাট থাকলেও পূর্ব দক্ষিণ পাশের ঘাট দুটি বিলীন হয়ে গেছে। পশ্চিম পাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন।

বরিশালের এমন গৌরবময় পর্যটন এর স্থানটি বর্তমানে জেলা প্রসাশনের তত্বাবধানে আরো উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। প্রতিদিন বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দূর্গা সাগরে হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তাই প্রাকৃতিক নৈসর্গ উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীদের কাছে বরিশালের এই ঐতিহ্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই হচ্ছে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রসাশনের মাধ্যমে বরিশালের এই অনন্য সুন্দর স্থানটিকে বিভাগের রত্নরুপে সজ্জিত করে রাখা হবে।

দূর্গা সাগরে আসা দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে ৭টি হরিণ। এর মধ্যে দুটি-দুটি করে ৪টি হরিণ আনা হয় যা বংশ বিস্তার করে বর্তমানে ৭টি হয়েছে। এখানে রয়েছে বানর, বিভিন্ন ধরনের পাখি। কিছু পাখি খাঁচায় রাখা হয়েছে এবং দূর্গা সাগরে শত বছরের পুরোনো গাছগুলোতে পাখি বসবাসের জন্য প্রকৃতির মত করে বসবাসের স্থান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দিঘীর ৪টি ঘাটের দুটিকে সংস্কার করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে নৌকা করে দিঘীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারে সেজন্য দেওয়া হয়েছে ৩টি প্যাডেল বোর্ডসহ দুটি কাঠের তৈরি নৌকা। দর্শনার্থীরা চাইলেই এই নৌকা ও প্যাডেল বোর্ড করে পুরো দিঘী ঘুরে দেখতে পারবেন নিজেদের মত করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দূর্গা সাগরের পুরোপুরি আনা হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায়।

বিশাল আকার এই দিঘী জুড়ে এখন বিচরণ করে বিভিন্ন প্রজাতির দেড় শতাধিক হাঁস। দিঘীর চারপাশে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১০০ কাঠের বেঞ্চ। এ সকল উন্নয়ন বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্চ বিত্তদের পৃষ্ঠপোষকতায়। দূর্গা সাগর দিঘীর চারপাশজুড়ে বর্তমানে পরিচ্ছন্ন করার পরে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফুলের চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে দূর্গা সাগরের অন্যতম আকর্ষণ এর মাঝখানে থাকা দ্বীপটি। কিছুদিন পূর্বেও যে দ্বীপটি ছিলো দূর্গম তা এখন পরিষ্কার করে দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুৎচালিত একটি আর্টিফিসিয়াল মুন (কৃত্রিম চাঁদ) যা সন্ধার পরে অমাবষ্যাতেও দিবে ভরা পূর্ণিমার আমেজ।

দিঘিটির পরিচালনাকারীরা জানান, ২০ টাকার টিকিটে বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী দূর্গা সাগর দিঘির সৌন্দর্য অবলোকন করতে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন পর্যটন আসছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, ধীরে ধীরে পর্যটকমুখর হয়ে উঠছে দূর্গা সাগর। ফলে বাণিজ্যের প্রসারসহ স্থানীয় লোকজনও সুফল পেতে শুরু করেছেন। আর প্রকৃতির কথা চিন্তা করে দিঘির উন্নয়নে এ বছর এখানে কিছু অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হলে এটি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ দিঘির সার্বিক উন্নয়নে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দিঘিতে বিপুল পরিমাণে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি গত দেড় বছরে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭০০ হাঁস, কয়েকশ কবুতর ও অন্যান্য পাখি সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে পাখিদের আকৃষ্ট করতে ফলদ গাছের বনায়নও করা হয়েছে। গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই দিঘিকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় পর্যটন সম্ভাবনা থাকায় এটিকে নানাভাবে উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলমান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
কপিরাইট © ২০২২ দৈনিক প্রথম প্রহর. কম
ডিজাইন ও ডেভেলপ : ডিজিটাল এয়ার