প্রকৃতিতে এখনো শীতের রেশ বহমান। বইছে দমকা বাতাস। তবে কুহেলিকাভেদী নরম রোদ, গাছে গাছে নতুন পাতা, তাতে রোদের ঝিকিমিকি, কোকিলের কুহু ডাক—এ সবই নিভৃতে বলে যাচ্ছে, ‘বসন্ত এসে গেছে।’
পঞ্জিকাও বলছে, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
আজ পহেলা ফাল্গুন। ভালোবাসা দিবসও। ঋতুচক্রের নিয়মে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। নিষ্পত্র শাখাগুলোতে নবীন কিশলয়। অজস্র পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় বনে লাগছে আগুন। তার আঁচ লাগছে নবীন-প্রবীণ মনেও। ভোরের বাতাসে জেগে উঠছে নতুন প্রাণ।
আজ পহেলা ফাল্গুন, আজ ভালোবাসার দিন
আজ পহেলা ফাল্গুন, আজ ভালোবাসার দিন
গাছে গাছে রঙিন ফুল জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। বসন্ত বাতাসে মনে জাগে ভালোবাসাও। একই দিনে পালিত হচ্ছে বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস। তাই যেন রাঙা পলাশের ডালে পাশাপাশি বসে ভাব-ভালোবাসায় মগ্ন একজোড়া কাঠশালিক।
এ ঋতু ফুলের ঋতু। পশ্চিমের বসন্তে চেরি ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতি। আমাদের বসন্তের ফুলের যেন অভাব নেই। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠালচাঁপা, কাঠগোলাপ, নাগেশ্বর, রুদ্রপলাশ, মহুয়া, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, স্বর্ণশিমুল—কত কত ফুল। এ বসন্তে থোকায় থোকায় ফোটে নজরুলের প্রিয় ফুল দোলনচাঁপা। ফোটে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফুল অশোক, পলাশ, শিমুল। এমনই সময়ে আমের মুকুলের ঘ্রাণে পাগল হয়েছিল কবিগুরুর মন।
মধুমাস চৈত্রের ঋতু এ বসন্ত। মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।’
অর্থাৎ মধুমাসে মৃদুমন্দ বাতাস বয়, মৌমাছিরা ফুলের মধু খায়। প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও এ সময় নতুন আনন্দভাব জাগে। এ ভাব প্রণয়ের। বৈষ্ণব পদাবলিতে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসের মতো কবিরা প্রেমরসের কবিতা লিখেছেন। এরই অপর নাম মধুর রস। মধ্যযুগের আরেক কবি দৌলত উজির বাহরাম খান বলেছেন, ‘মধুমাসে উতলা বাতাস, কুহরে পিক; যদি সে কমল শিশিরে দহল কি করিব মধুমাসে।’
Leave a Reply