একটি যুদ্ধ অনেক মানুষের জীবনের নিয়মই পাল্টে দেয়। পাল্টে দেয় হিসাবনিকাশ। কেউ পরিবার হারান, কেউ হারান মনোবল। কারো বা প্রিয়জন হয়ে ওঠে স্মৃতির উপকরণ। অনেকে তো নিজেকেই হারিয়ে ফেলেন। তবে হরি বুধা মাগার যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের পা হারালেও, মনোবল হারাননি। পা হারানোর কারণে হয়ত সেনাবাহিনীতে আর জায়গা হয়নি, কিন্তু মনের ইচ্ছায় তিনি যা করেছেন তা কোটি মানুষের পক্ষেও সম্ভব নয়।
হরি বুধা মাগার নকল পায়ে ভর করে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন। জয় করেছেন তামাম দুনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। কিন্তু এই অভিযান মোটেই সহজ ছিল না হরির কাছে। বারবার বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু জেদ ছাড়েননি। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ মনে করেছিলেন হরি। এগিয়ে গেছেন লক্ষ্যের দিকে।
২০১০ সাল আফগানিস্তানে ছিলেন ব্রিটিশ গোর্খা রেজিমেন্টের সৈনিক হরি। সেইসময় এক বিস্ফোরণের ঘটনায় যুদ্ধক্ষেত্রেই পা হারান তিনি। দু’টো পা বাদ যায়। অগত্যা সেনাবাহিনী ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু মনের মধ্যে এভারেস্ট ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিল। ১৩ বছর পর গত বৃহস্পতিবার সেই স্বপ্নপূরণ হয় প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনার।
গত ১৭ এপ্রিল যাত্রা শুরু করেন হরি। ৬ মে এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করেন মাগার ও তার সঙ্গীরা। তারপর দীর্ঘপথ অতিক্রম করে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা নাগাদ পৌঁছান ৮ হাজার ৮৪৮ মিটারের শৃঙ্গের মাথায়। ১৯৫৩ সালে প্রথম এই শৃঙ্গ হয় করে পর্বতারোহীদের মনে স্বপ্ন জাগিয়েছিলেন তেনজিং নোরগে ও এডমুন্ড হিলারি। সেই স্বপ্নই বাস্তব করে দেখালেন ৪৩ বছর বয়সি হরি।
এই যাত্রাপথে বারবার অসহায়তা গ্রাস করেছিল কিন্তু হার মানেননি মাগার। তিনি বলেন, ‘কঠিন ছিল। আমাদের কল্পনা করার বাইরে ছিল এই যাত্রায় প্রতিকূলতা। কিন্তু শুধু ভেবেছি শীর্ষে পৌঁছাতেই হবে। যতই আঘাত আসুক না কেন, যতক্ষণ সময় লাগুক যেতেই হবে এভারেস্টের মাথায়।’
২০১০ সালে পা হারিয়ে যখন বাড়ি ফিরে আসেন হরি, তখন এক বিশাল মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছিল তাকে। সেই অবসাদ থেকে বের হতে সাহায্য করেছিল এই এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন। ধীরে ধীরে নিজেকে সেই স্বপ্নপূরণ করার জন্য তৈরি করা শুরু করেন।
শারীরিক প্রতিকূলতা ছাড়াও আইনি জটিলতার কারণে বারবার ধাক্কা খেয়েছে হরির স্বপ্ন। ২০১৭ সালে এভারেস্টের ওঠার নিয়মে বদল আনা হয়। দৃষ্টিশক্তিহীন এবং দু’টি পা নেই এমন কেউ পর্বতারোহণ করতে পারবেন না। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে ছোটেন হরি ও তার মতো মানুষেরা। সেই লড়াইয়ে সফলতা পান তারা। ২০১৮ সালে নিয়ম বাতিল হয়। তারপর কেটে গেছে ৫ বছর। অবশেষে নিজের স্বপ্নপূরণ করলেন হরি।
Leave a Reply