বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি,
যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না তাদের জন্য সর্বক্ষণ পীড়া দেয়-এমনই একজন শিক্ষার্থী যার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার ২০২৩ সালে এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত জারিন তাহসিন (অর্পা)।
মানুষের স্বপ্ন বড় বিচিত্র। কেউ স্বপ্ন দেখে বিলাসী জীবনের আর কেউ স্বপ্ন দেখে, মানবতার সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে কাটিয়ে দেবে সারাজীবন সেরকমেরই একজন অর্পা।
মানব সেবার তাড়না মানুষকে যুগে যুগে করেছে মহৎ। মানব সেবার জন্য অনেকেই চিকিৎসক হতে চায়। এমন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আরও উচ্চ শিখরে পা রাখতে যাওয়া মফস্বলের মেয়ে জারিন তাহসিন (অর্পা)। সে এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী সরকারি কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শুধু তাই নয়, এবারে এইচএসসি পরীক্ষায় বেতাগী সরকারি কলেজ ফলাফলের দিক দিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৭৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও এরমধ্যে অনেকেই ফেল করে এবং বিজ্ঞান ও বানিজ্যে বিভাগে ১টি করে মানবিকে ৪ টি মোট ৬টি জিপিএ-৫ পায়। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় সবচেয়ে তলানীতে। কিন্ত এর ভেতরেও ঐ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগে একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়ে সাফল্যের ধারা অক্ষুন্ন রেখে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের মাঝে স্থান করে নিয়েছে এই কিশোরী।
দুই ভাই বোনের মধ্যে অর্পা সবার ছোট। বাবা আব্দুল হাই সাবেক পোস্টমাস্টার ও পৌর শহরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ.কে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আর মা জেসমিন নাহার বেতাগী উপজেলা সমাজ সেবা বিভাগে সমাজ কর্মি হিসেবে কর্মরত। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় অত্যন্ত মনোযোগী অর্পা। সে এর আগে বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সিতেও জিপিএ-৫ ও একই প্রতিষ্ঠানে ৮ম শ্রণিতে এবং বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রণিতে এ গ্রেডে বৃত্তি পান। এসএসসিসহ বরাবরেরমত এইচ.এসসিতেও এবারে সেরা রেজাল্ট করবে এটা ছিলো তার লক্ষ্য। এইচ.এসসিতে তার এ ফলাফল নিয়ে কলেজের শিক্ষকরাও বেশ আশাবাদী ছিলেন বলে জানান পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মাহাতাব হোসেন।
জারিন তাহসিন (অর্পা)‘র শিক্ষা জীবনের মধ্যে যদিও সেই সময় ছিলো মহমারী করোণা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবরোধ, হরতাল ও নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তারপরও থেমে ছিলো না অর্পা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা পড়াশুনা করে সে। সময় ও তারিখের রদবদল হয়েছে বারবার। এতে অর্পার মনে অশান্তি থাকলেও তবুও হাল ছাড়েনি। গন্তব্যে অনেক দুর হলেও অবেশেষে অগ্রসর হয়েছে শিক্ষা জীবনের আরও একধাপে। বর্তমানেও সে অবরোধের মধ্যে বরিশালে থেকে চিকিৎসক হতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মা, বড় ভাই, বন্ধু, শিক্ষকসহ অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেও এই প্রত্যাশিত রেজাল্টের পেছনে কারিগর হিসেবে তার বাবাকেই অনুভব করে অর্পা। পবিত্র কোরআন শরীফ শুনতে ও পড়তে পছন্দ করে এই কিশোরী। তাছাড়াও অনেকের মতোই তার প্রিয় অবসরে বই পড়া। ফাস্ট ফুড অর্পার কাছে খুব প্রিয় খাবার। পড়াশুনার বিষয় হিসেবে জীব বিজ্ঞান তার কাছে বেশি প্রিয়। সে পাঠ্য বইয়ের বাইরে পত্রিকা নিয়মিত পড়ে। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী অর্পা ধর্মকর্ম পালনেও অনেক সচেতন।
অর্পার স্বপ্নের গাড়ি এখন পথ চলতে শুরু করেছে। নিজের প্রতি রয়েছে তার অগাধ আস্থা আর বিশ্বাস। একদিন সে স্বপ্ন চূড়ায় বাসা বাঁধবে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবে।
চিকিৎসক হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে অর্পার বলেন, যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না আমি তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবো। কঠিন, জটিল রোগীর মুখে হাসি ফোটাবো। তার যুক্তি হল, অন্য সব পেশার চেয়ে মানব সেবার সুযোগ চিকিৎসা খাতেই বেশি। অনেকে স্বপ্ন পুরণ করতে রাজধানীতে পাড়ি জমালেও অর্পা তার স্বপ্ন পুরণে বরিশাল শেরই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পড়তে আগ্রহী।
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন একদিন বাস্তবে রূপ নেবে, প্রতিটি মুহূর্ত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবে- এটাই কৃতি শিক্ষার্থী জারিন তাহসিন (অর্পা)‘র লক্ষ্য। পাশাপাশি বাবা মায়ের উৎসাহ-প্রেরণা আর নিজের ইচ্ছাই তার চলার পথের শক্তি। বাবা আব্দুল হাই বলেন, মেয়ের এ স্বপ্নে আমরাও খুশি। এ এজন্যে সে সকলের দোয়া চাই।
Leave a Reply