👨💼 জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি,
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে জামুহালি চশমায়ে উলুম দ্বি-মুখী আলিম মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই মাদ্রাসার সভাপতি বোরহান উদ্দিন ফকির ও অধ্যক্ষ আবু নাছের মোঃ রেজাউল করিম মোটা অংকের ঘুষবাণিজ্য করছে।
ওই স্ট্যার্টাসের পর আজ শুক্রবার পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা আগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বড়তারা ইউপির চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মোঃ রেজাউল করিম উপাধ্যক্ষসহ পাঁচটি পদে নিয়োগে ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ডিজির প্রতিনিধি আসেননি। একারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ওই মাদ্রাসার নিয়োগকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ- বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন বড়তারা ইউপি ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিনসহ একাধিক ব্যক্তি।
ইউপি সদস্য রুহুল আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছিলেন, আগামী (১৬) ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ক্ষেতলাল উপজেলার জামুহালি চশমায়ে উলুম দ্বি-মুখী আলিম মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই নিয়োগ বোর্ডকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ওই মাদ্রাসার সভাপতি ও প্রিন্সিপাল বাণিজ্য শুরু করেছে। মোট পাঁচটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে আনুমানিক ১২-১৫ জন আবেদন করেছে। ওইসকল আবেদনকারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে টাকা চুক্তি করে প্রার্থী সিলেক্ট করা হয়েছে। মাদ্রাসার সভাপতি ও প্রিন্সিপালের এমন কর্মকাণ্ডে বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা। এবার দিয়ে চার বারের মতো একই মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড বাতিল হয়েছে শুধুমাত্র সভাপতি ও প্রিন্সিপালের এমন দূর্নীতির কারনে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও সেসব ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে চাকুরী পাওয়ার কথা সেখানে গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা এতে ঝড়ে পড়ছে মেধাবী আর টাকার বিনিময়ে চাকুরী হচ্ছে অযোগ্যদের। তাই এমন দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর সভাপতি ও প্রিন্সিপালের কবল থেকে রেখায় পেতে চায় ওই এলাকার সাধারণ মানুষ, সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী ওইসকল শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবার।
যে, মাদ্রাসায় শেখানো হয় কোরআন, হাসিদের কথা আর সেখানে টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে চাকুরী। মাদ্রাসাটি আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় একাধিক চাকুরী আবেদনকারী ও পরিবারের পক্ষ থেকে সভাপতি ও প্রিন্সিপালেন এমন অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়েছি। যা খুবই দুঃখ জনক। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে, গ্রামের মধ্যে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী একটি মাদ্রাসার মানসন্মান বজায় রাখতে ওই সকল ঘুষখোর সভাপতি ও প্রিন্সিপালের আমলে এই নিয়োগ বোর্ড বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় নিয়োগ বোর্ডর দিন ঘটতে পারে বড় ধরনের কোন ঘটনা। তাই সময়ের আগেই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং নিয়োগ বোর্ডটি বাতিল করবেন সেই প্রত্যাশায় করছি। পাশাপাশি জেলাও উপজেলার সাংবাদিক মহলের সহযোগিতা কামনা করছি। ইউপি সদস্যের এমন স্ট্যাটাসের পর ওই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে এমনটাই মনে করছেন সচেতনমহল।
আজ শুক্রবার সকালে সরজমিনে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, মাদ্রাসার মুল ফটক বন্ধ রয়েছে। মুল ফটকের নোটিশ টাঙানো রয়েছে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে, এতদ্বারা এত জামুহালী চশমায়ে উলুম দ্বিমুখী আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা অদ্যই ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষনা করা হলো। পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার দপ্তরী মামুনুর রশীদ বলেন, শুক্রবার মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। জানিনা কি কারনে সেটি স্থগিত হলো। অধ্যক্ষ স্যার আমাকে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিতে বলেছে এজন্য আমি নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তি জানান, এই মাদ্রাসার নিয়োগকে ঘিরে এবার দিয়ে প্রায় চার-পাঁচ বারের মতো একই ঘটনা ঘটিয়েছে মাদ্রাসার সভাপতি ও অধ্যক্ষ। এ কারণে প্রতিবার এভাবেই নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হয়েছে। একই পদে বেশ কয়েকজনার থেকে টাকা নেওয়ার কারণেই এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে যতোদিন পর্যন্ত এমন দূর্নীতিবাজ সভাপতি ও অধ্যক্ষ জড়িত থাকবে ততোদিন পর্যন্ত এমন কর্মকাণ্ডই ঘটাবে এটা স্বাভাবিক। এমন দূর্নীতিবাজ সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষসহ পাঁচটি পদে নিয়োগে ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বড়তারা ইউপির চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু নাছের মোঃ রেজাউল করিম জানিয়েছেন
ডিজির প্রতিনিধি আসেননি। একারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ছফিউল্লাহ সরকার বলেন, এ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। কারন আমাকে অবগত করা হয়নি। তার কিভাবে এই নিয়োগ দিচ্ছে আর কেনই বা স্থগিত করেছে এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
Leave a Reply